বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা এত বেশি যে বলে হয়তো শেষ করা যাবে না। বাদাম ক্যালসিয়াম এবং প্রোটিনে ভরপুর একটি খাবার। যদিও বাদামে ক্যালরি এবং চর্বির পরিমাণ বেশি, তবে তা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বাদামে থাকা বেশিরভাগ ফ্যাটই হচ্ছে মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাট যা দেহের জন্যে ক্ষতিকর নয়।
বাদামে বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে। বিশেষ করে, বাদামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই ও ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে। এছাড়া, রয়েছে ওমেগা ৬ এবং ওমেগা ৩ পলি আন-স্যাচুরেটেড ফ্যাট। বুঝতেই পারছেন যে, ভিটামিনে ভরপুর বাদাম আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য।
বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা
বিভিন্ন রকমের খাদ্য রিসার্স থেকে বাদামের বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানা গিয়েছে। বিশেষ করে, হার্ট ডিজিজ বা হৃৎপিন্ডের রোগ থেকে এটি আমাদের রক্ষা করে থাকে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বাদাম কেন বেছে নিবেন, জেনে নিন-
১. বাদাম ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
আমাদের ত্বকে নানা ধরণের ক্যান্সার হয় আর বাদাম প্রায় সব ধরণের ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে থাকে। তবে, সব বাদাম নয়, বিশেষ করে ব্রাজিল বাদাম। বর্তমানে ব্রাজিল বাদাম খুবই পরিচিত তার পুষ্টিগুণে। মূলত ব্রাজিলে এর উৎপত্তি বলে এটি ব্রাজিল বাদাম নামেই পরিচিত।
ব্রাজিল বাদামে রয়েছে ভিটামিন-এ, ই, এবং প্রচুর পরিমানে এন্টিঅক্সিডেন্ট। ব্রাজিল বাদামে ক্যালরি- ১৮৪ গ্রাম, প্রোটিন- ৪.৩ গ্রাম এবং চর্বি- ১৯ গ্রাম। তাছাড়া ব্রাজিল বাদামে উচ্চ সেলেনিয়াম রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার। সেলেনিয়াম এক ধরনের খণিজ যা আমাদের দেহ থেকে উৎপন্ন করা যায় না। খাবার গ্রহণের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়। দেহের জন্য পর্যাপ্ত সেলেনিয়াম পেতে কয়েকটি ব্রাজিল বাদাম যথেষ্ট। তাছাড়া সেলেনিয়াম দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
এন্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের ত্বকের কোষকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে যা ব্রাজিল বাদামে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। ব্রাজিল বাদামে থাকা চর্বি শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর। অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত ভালো উপাদান ত্বকের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে খুবই কার্যকরী। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি এবং লালচে ভাব দূর করতে সহায়তা করে। মসৃণ ত্বক পেতে ব্রাজিল বাদাম নিয়মিত খেতে পারেন।
২. বাদাম চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
বাদামে চুল বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ রয়েছে। ব্রাজিল বাদাম এক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকর। ব্রাজিল বাদাম ভিটামিন-ই সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি চুলের জন্য খুবই উপকারী।
চুলের আগা ফাটা রোধ, চুল বৃদ্ধি এবং নতুন চুল গজাতে ভিটামিন-ই কাজ করে। ভিটামিন-ই শারীরিক সহনশীলতা বজায় রাখে। তাছাড়া ব্রাজিল বাদাম ব্রণের সমস্যাও দূর করে থাকে। নিয়মিত ব্রাজিল বাদাম খেলে চুল এবং ত্বক থাকবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল। কাজেই, বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা বলতে গেলে চুলের বৃদ্ধির কথা বলতেই হয়।
৩. বাদাম স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে
বয়সের সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে। আর স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে বাদাম খুবই উপকারী। এ ক্ষেত্রে বেছে নিতে পারেন কাজু বাদাম। ১০০ গ্রাম কাজুতে রয়েছে ৫৫৩ কিলো ক্যালরি। কাজুর খণিজ উপাদানগুলো আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামে সমৃদ্ধ। তাই এটি শরীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্মৃতিশক্তি হ্রাসের প্রবণতা কমিয়ে দিবে।
এছাড়া কাজুতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন এবং জিঙ্ক রয়েছে। যা স্মরণশক্তি বাড়ায়। কাজু বাদাম শ্বাসকষ্ট এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতেও সহায়তা করে থাকে।
৪. বাদাম ওজন কমায়
অতিরিক্ত ওজন যাদেরকে চিন্তায় ফেলে রাখে সর্বক্ষণ, তাদেরকে বলি চিন্তা বাদ দিয়ে প্রতিদিনের ডায়েট চার্টে যোগ করুন বাদাম। এ ক্ষেত্রে বেছে নিন কার্যকরী পিক্যান বাদাম। ১ টি পিক্যানে রয়েছে ১৯৩ গ্রাম ক্যালরি! তাছাড়া পিক্যান বাদামে চর্বি – ২০ গ্রাম, অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার শরীরের সঠিক খাদ্য গ্রহণে কাজ করে।
এন্টিআক্সিডেন্ট সম্পন্ন শীর্ষ ১৫টি খাবারের মধ্যে পিক্যান অন্যতম একটি। পিক্যানে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন এবং মিনারেল রয়েছে। পিক্যানের জন্ম আমেরিকা এবং ম্যাক্সিকোতে। শরীরের ঘেরলিন হরমোনকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে পিক্যান। ঘেরলিন হরমোন শরীরে ক্ষুদা বাড়ায়। আর সঠিকভাবে শরীরকে নিয়ন্ত্রিত করে পরিমিত খাদ্য গ্রহণে সহায়তা করে থাকে পিক্যান বাদাম। তাই, কম সময়ে শরীরের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে পিক্যান বাদাম খুবই কার্যকর।
৫. বাদাম পিরিয়ডের সমস্যা দূর করে
পিরিয়ডের সময় সাধারণত নারীদের মন-মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকে। কিছু খেতেও ভালো লাগে না। তলপেটে ব্যাথা থাকে। বাদাম, বিশেষত পিক্যান বাদাম ক্যালসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি পিরিয়ড সময়ে খেলে কোমরের ও তলপেটের ব্যাথা কমায়। মন সতেজ রাখে।
নারীদের শরীরের জন্য, বিশেষত বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন রকম পরিবর্তণে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খুবই প্রয়োজন। পেস্তা বাদামও পিরিয়ডের সমস্যা সমাধানের জন্য উপকারী। তাই, নিয়মিত পিক্যান ও পেস্তা বাদাম খেলে নারী স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকার পাওয়া যায়।
৬. বাদাম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে বাদাম নিঃসন্দেহে খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন। শর্করাযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত চর্বি, ফাইবার এবং প্রোটিন রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করতে সহায়তা করে বিভিন্ন ধরণের বাদাম। বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা বা রোগ নিয়ন্ত্রণের কথা যদি বলেন তো ডায়াবেটিসের কথা বিশেষভাবেই বলতেই হয়।
এর মাঝে কাজু বাদাম ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ। কাজু বাদাম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এছাড়া এই বাদামটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী। তাছাড়া হাড়ের ক্ষয় রোধ, হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্ক সচল রাখতিও বিশেষ ভূমিকা পালন করে কাজু বাদাম।
৭. বাদাম সুষম হরমোন গঠনে সহায়তা করে
হরমোন আমাদের শরীরের গঠন এবং বৃদ্ধিতে কাজ করে থাকে। তাই, হরমোন ঠিক রাখা খুবই জরুরি। পেস্তা বাদামে রয়েছে আয়রন, ভিটামিন – এবং ফাইবার। পেস্তা বাদাম ভিটামিন-বি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি শরীরের হরমোন সুষম এবং স্বাস্থ্যকর রাখতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া, দুটি এন্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত পেস্তা বাদাম চোখের ব্যাকটেরিয়া সমস্যা সমাধানে দারুণ কাজ করে।
৮. বাদাম ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক
ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বাদাম অনন্য ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে আখরোট খুবই উপকারী। আখরোটে ওমেগা-৩ এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড রয়েছে। আখরোটে এন্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ খুবই বেশি যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
তাছাড়া হৃদযন্ত্রের সমস্যা সমাধানে স্ট্রোক প্রতিরোধ করে আখরোট। তাছাড়া, যারা তৈলাক্ত মাছ এড়িয়ে যেতে চান, তারা বিকল্প হিসাবে আখরোট বেছে নিতে পারেন।
৯. বাদাম কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে
বাদাম আপনার শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এ ক্ষেত্রে, আপনি বেছে নিতে পারেন পাইন বাদাম। পাইন বাদামে রয়েছে অতিরিক্ত ফ্যাটি এসিড যা মস্তিষ্ক সচল রাখতে সাহায্য করে। এগুলোতে গাছের স্টেরল এবং স্ট্যানল রয়েছে যা খারাপ কোলেস্টেরল হ্রাস করতে এবং দেহে ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।
পাইন বাদামে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এটি মেজাজ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। তাই, বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা হিসেবে কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণের কথা বলতেই হবে।
১০. বাদাম শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে
বাদাম প্রচুর পরিমানে প্রোটিনে ভরপুর। প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করতে প্রোটিনের বিকল্প নাই। তাই, প্রোটিনযুক্ত খাবারের তালিকায় বাদামকে প্রথম সারিতে রাখতে পারেন।
সব ধরণের বাদামেই শক্তি বৃদ্ধিকারক উপাদান রয়েছে। তবে, পিক্যান বাদামে ভিটামিন-৩ রয়েছে যা বিশেষভাবে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি করে, ধমনী শক্ত করে এবং ক্লান্তি দূর করে।
১১. বাদাম বহুমাত্রিক সমস্যার সমাধান করে
বাদাম এমন একটি খাবার যাকে বলা হয় একসাথে বহু সমস্যার সমাধানকারক। বাদামকে বলা হয় এন্টিঅক্সিডেন্টের প্রধান উৎস। শরীরের কোষ সুরক্ষা দিতে এন্টিঅক্সিডেন্টের প্রয়োজন। কোষকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে বাদাম প্রয়োজনীয় একটি খাদ্য।
বাদামে রয়েছে প্রদাহজনক বিরোধী বৈশিষ্ট্য যা শরীরে আঘাত, ব্যাকটেরিয়া, বিভিন্ন ধরনের রোগজীবাণু থেকে নিজেকে রক্ষা করে। তাছাড়া এটি বাত এবং হতাশা কাটাতে সাহায্য করে। হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় বাদাম। বাদামে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে যা রোগের ঝুঁকি কমায়। রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ঠিক রাখে। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে। প্রতিদিনের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
১২. বাদাম হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা আমাদের খাবার হজম করতে খুবই কার্যকরী। খাওয়ার তারতম্যের জন্য খাবার হজম না হলে শরীরে অশান্তি সৃষ্টি হয়। অন্যান্য বাদামের তুলনায় কাঠ বাদামে ফাইবারের পরিমাণ বেশি। হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে কাঠ বাদাম খুবই উপকারী। কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর ফাইবার যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া ভিটামিন-এ, ই, বি-১,বি-৬ এবং প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামে ভরপুর কাঠ বাদাম।
শেষ কথা
বাদামের স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জেনেছেন। বাদাম কতটা প্রয়োজনীয় আমাদের শরীরের জন্য তা বুঝতে পেরেছেন। সুতরাং, বুঝতেই পারছেন, আপনি বাদাম খেয়ে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। তাই, সঠিক খাদ্য তালিকায় বেছে নিতে পারেন ব্রিলিয়ান্ট খাদ্য বাদাম।